সনাতন দা: কেউ নতুন চাকরি পেলে ‘মাঞ্জা’ শব্দটা একটা নতুন মাত্রা পায়। সনাতন দা ও নতুন চাকরি পেয়েছে। প্রবেশনারী অফিসার, উত্তরা ব্যাংক। সে কী ভাব! এদিকে সনাতন দা’র ভাব বাড়ে, অন্যদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পোস্টিংয়ের কলকাঠি নাড়ে। দিন পনেরো মোহাম্মদপুর টু মতিঝিল। উত্তরা ব্যাংকের হেড অফিস। ভাবখানা এমন যে,সেইমাপের কর্মকর্তা হয়ে গেছে। কোন কাজ নেই। হাজিরা দিয়ে ব্যাংকের নিচে অদূরে টং দোকানে দল বেধে বিড়ি ফোঁকা। এদিকে দাদারা মনের আনন্দে ফুঁকছে আর ওদিকে ভাগ্যবিধাতা পোস্টিংয়ের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকছে।
ব্যাংকার বানানোর মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঢাকায় রাখার সমস্ত প্রকার জোরাজুরি, ফোনাফুনিকে কাঁচকলা দেখিয়ে সনাতন দা’কে নাটোর বনপাড়া ব্রাঞ্চের টিকিট ধরিয়ে দিল।সাথে সাড়ে সাত হাজার টাকা। প্রথম মাইনে। প্রথম অনুভূতি। দুপুরের খা খা করা গা পুড়ে যাওয়া রোদটাও যেন নীল জোৎস্না। নীল লোহিতের ‘কেউ কথা রাখেনি’ এর বাবা’র মত করে এক বড় ভাই বলেছিল, ‘দেখিস! একদিন’ তোকে ঢাকা নিয়ে আসব। বড় ভাই এখন অন্য ব্যাংকে। সনাতন দা ও। ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু না!
আমার ভুলের খেসারত কি আমার বাপ দেবে? নারে ভাই! যার যার ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হয়। যত পানি খাই তত লিটার খোদার লীলায় বেরনোর পথ পেয়ে যায়। আমি যেন শালা এক ফিল্টার। পানি ফিল্টিং করে রাত কাটিয়েছি।
সকালে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে ঢুলুঢুলু চোখে স্যুটেড-বুটেড এবং গলায় টাই ঝুলিয়ে দুলতে দুলতে ব্রাঞ্চের সামনে হাজির। এক শ্রেণির লোক আছে তারা যেথানেই যাক না কেন আগে খোজে টং দোকান কই আছে। কারণ, ঘুরিয়ে বললেও চলে যে, চা-সিগারেট এদের খুব ভক্ত। পাঁচ টাকার এক কেক, ময়লা এক কাপ চা আর অতীব সুস্বাদু একখানা সিগারেট। রাজকীয় খানা।
ঠিক দশটা। ব্রাঞ্চে প্রবেশ করে ম্যানেজারের রুমে সালাম দিয়ে চেয়ারে বসলাম। এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি কোন মহারথী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ জয় করে এসেছি। ম্যানেজার স্যার সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমার সিটটা দেখিয়ে দিলেন। প্রথম কাজ টিটি পাসিং এবং চেক ভেরিফাই করে চেক নেয়া আর নগদ মাল দেয়া। এই দেয়া-নেয়ার গ্রাহক ছিল অনেক ক্ষেত্রেই ব্রাঞ্চের পিছনে থাকা ডিগ্রি কলেজের বনলতা সেনরা। সেন বংশের শাসনকাল অনেক আগেই লোপাট হয়ে গেছে। সেইখানে জায়গা করে নিয়েছে জীবনানন্দ দাশের বনলতারা। তবে বেশিরভাগ বনলতারা ছিল কাসেম বিন আবু বকরের ‘বোরকাপড়া সেই মেয়েটি’র মত।তরুন মন উচাটন হলেও ম্যানেজার স্যারের কড়া শাসন সনাতন দা’কে নব্য জীবনান্দ দাশ হওয়ার রাশ টেনে ধরেছিল। কিন্তু মনে কবি, সামনে জীবন্ত ছবি। সেই ছবি, যে ছবিটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এই নাটোরে আসা। বেলা বোস কি তাহলে এই নাটোরেই কোন এক বনলতার মাঝে ঘুমিয়ে আছে?
আপাতত পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম। তারপর না হয় দেখব যে আসলে কী হয়েছিল!
[বিঃদ্রঃ স্থান-কাল-পাত্র-ঘটনা সবই সত্য। শেয়ার করছি এ কারনে যে, এটা motivation নয়, inspiration।]
[বাকি অংশের জন্য ‘সনাতন দা’ কে ক্লিক করে ফলো করে রাখুন। ]