সময়টা ছিল দুপুরের বার্ধক্য। বিকেল হয় হয় করছে কিন্তু হতে পারছে না। শীতের হালকা কুয়াশা ঘিরে আছে আকাশটাকে।
পান্থপথ সিগনালকে পেছনে ফেলে সামনে তাকিয়ে দেখি দুই মানুষ সমান উঁচুতে এক লোক বসে আছে। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। অত উঁচুতে কেন এবং কীভাবে বসে এগিয়ে আসছে জ্যামের কারণে দৃষ্টিতে আঁটেনি। কিছুটা কাছে আসতেই দেখলাম বিশালদেহী এক হাতি।
রং ধূসর। কুলোর মত দুটি কান পাখার মত বাতাস করছে। কুঁতকুঁতে দুটি চোখ। সে চোখের সাথে কারো প্রেমিকার আঁখিযুগলের তুলনা করলে প্রেম ঠিকবে ঠিক তিন মিনিট। প্রথম মিনিটে ফোঁসফোঁস। দ্বিতীয় মিনিটে ভেউ ভেউ। তৃতীয় মিনিটে, তোমার মুখ যেন আর না দেখি- বলে প্রেমের মুখে সিল-গালা। লাগামহীন চিন্তার গতি রাশ টানা খেল।
হাতির পিঠে বসা হাতির ড্রাইভারের কাব্যিক নাম -মাহুত। আসলে মউত। তবে সেটা আপনার বা আমার জন্য নয়। নিষ্পাপ কুঁতকুঁতে নিরাসক্ত চোখে তাকিয়ে থাকা হাতিটার জন্য। মাহুতের হাতে দেখলাম লোহার আংটা লাগানো কয়েক হাত লম্বা একটা লাটি। অতবড় যে হাতি, সে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। এই অজ্ঞতার নাম ‘পোষ মানা’।
সবার মত আমিও পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতিটার কাছাকাছি গিয়ে ছবি তুলতে গেলাম। ভয় পেয়ে গেলাম। না, হাতিটা আমাকে তাড়া করেনি। তাড়া করেছে আমার বিবেক। ঘুমিয়ে থাকা বিবেক। ক্যামেরায় ছবিকে যখন জুম করলাম দেখলাম যে, হাতিটার কান ও মাথার সংযোগস্থলে মানবীয় অমানবিকতার চিহ্ন দগদগে ঘা হয়ে জেগে আছে। শুড়ের পাহারাদার ধবধবে সাদা দাত দুটো কাটা। কত দামে বিকিয়ে গেছে সে হিসেব কষা সাধ্যের বাইরে।