প্রত্যেক সফলতার পিছনে যেমন গল্প থাকিতেই হইবে তেমনি প্রত্যেক ব্যর্থতার পিছনেও গল্প থাকিবে। যাহারা ব্যর্থ হইতে হইতে সফল কুমার হইয়া যান, আমরা আম–জনতা তাহাদের কথা ভিটামিনের মত গিলিয়া থাকি। আর যাহারা ব্যর্থ হইতে হইতে গুটাইয়া যান, তাহাদের কথা আমরা ‘বাল’ বলিয়াও দাম দেই না এবং দাম দেবার প্রয়োজনও বোধ করি না। আপাত সফল(শুধু একটা চাকরিই পেয়েছে আর কিছু নয়) কেউ যদি বৃষ্টি–
বাদলার দিনে ফেসবুক নামীয় বইখানার কল্যাণে তাহার টাইম–লাইনে একখানা ইশটাটাশ প্রসব করিয়া দেন, ‘একটু রোদ উঠলে কী মজাই না হত’- ওমনি দেখবেন কী যে লাইক–কমেন্টের তেলযুক্ত বন্যায় ওই ইশটাটাশখানা সাড়ে তিনহাত উপরে দুলিতেছে। ব্যাপারখানা এমন যে, ওই ইশটাটাশে যদি লাইকের খোঁচা বা কমেন্টের তেল দেওয়া হয়, তাহা হইলে সফল হওয়া ঠ্যাকায় কুন হালায়!!!
অন্যদিকে, বারবার ব্যর্থ হইতে থাকা ভাইটি যদি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ কোন টপিক সহজে লিখিয়া দেয়, তাহা হইলেও তাহার লাইক–কমেন্ট ত্রিশ ক্রস করিতে করিতেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যাইয়া থাকে। মানুষ হিসেবে আমরা এমনই। ওই ভাইকে ‘ধুস শালা! এখনও একটা চাকরিই ‘ম্যানেজ’ করতে পারলি না, আবার জ্ঞানের কথা লিখিস!’ বলিতে একটু দ্বিধাও করি না। কিন্তু এখানেই এটার দরকার ছিল বেশি এবং খুব বেশি।
বলি কী, প্রথম শ্রেণির বা যে কোন শ্রেণির একটা চাকরি পেলেই অন্য একটা শ্রেণির খসখসে হাত তেলতেলে হইয়া যায়, মুখ দিয়া, ক্ষেত্রবিশেষে কি–বোর্ডের কী দিয়া মধু ঝরিতে থাকে; ‘স্যার, স্যার’ বলিতে বলিতে মুখে ফেনা তুলিয়া ফেলে।আপনি জানেন কি– ওই তেলতেলে কমেন্ট ওই আপাতসফল পাবলিকের দেখিবার মত সময় নাই। তিনি ‘একটু রোদের মজা’ ঢালিয়া দিয়া ৯টা–৫টা পশ্চাৎদেশে শুল নিয়া ঘুরিতেছেন।
ফেসবুকে কোন লেখা পোস্ট করার সময় আমরা প্রায় সব সময়ই আগে শিরোনাম তারপর লেখা; তারপর নিজের নাম; তারপর কী ধরণের কামলা খাটি তা লিখি।
একবার ভাবুন তো, ‘কী ধরণের কামলা খাটি’লেখার মধ্যে একটু হলেও অহঙ্কারটা উঁকি মারছে কি–না। নিজের নামের বা ছদ্মনামের আসলে কোন মূল্যই নেই এখানে। অথচ এটাই হওয়া দরকার ছিল খুব বেশি। সফল তখনই যখন প্রাতিষ্ঠানিক কোন পদমর্যাদা নয় বরং নিজের নাম বা যে নামে নিজেকে চেনাতে চাই, সে নামেই লোকে চেনে – জানে।