দ্যাশ। দ্যাশ বলতে খানা-খন্দে, জ্যামে-জটে ভরা সিমেন্টের ঢাকা শহরে উবার এল। ঘামে ভেজা শান্তিপ্রিয় মানুষ জ্যামে পড়ে একটু এসির বাতাস খেতে শুরু করল শান্তিতে। ভাড়াও Reasonable। এরই মধ্যে প্রচন্ড বৃষ্টিতে সিটি কর্পোরেশনের কল্যাণে নর্দমাগুলো অন্তরে জমে থাকা মালামাল উগরে দিল। পয়মাল হয়ে গেল রাস্তাঘাট। বৃষ্টির পানি রাস্তাঘাটে সংস্কৃত ভাষায় বুড়িগঙ্গায় না যাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে দিল। বৃস্টিরং পানিনং গঙ্গায়ং ন নমঃ। গেল না। মতিঝিল হয়ে গেল পোর্টেবল সীবিচ। এই পোর্টেবল সীবিচে উবার ডোবার (সাবমেরিন), কুবার(পদ্মা নদীর মাঝি কুবেরের নৌকা) সার্ভিস চালু করল না। হা মাবুদ!
শহরে লোক বাড়ে। যান বাড়ে, জট বাড়ে। বাড়ে যন্ত্রণা। শুধু কমে সময়ের মান আর জীবনের দাম। এই পরিস্থিতিতে চলে এল আরেকটা ‘কম’। পাঠাও ডট কম! রাইড শেয়ারিং। হেব্বি সার্ভিস। নামে কম থাকলেও সময়ের দাম বাড়িয়ে জ্যাম ঠেলে মতিঝিল টু মোহাম্মদপুর মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এ গলি, ও গলি, চোরা গলি, তস্য গলি পেরিয়ে গন্তব্য। ভাড়া Reasonable। যেখানে সিএনজিওয়ালাদের ছিল পোয়াবারো, পাবলিকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে পকেট কাটার রমরমা ব্যবসা; ‘এই মামা গুলিস্তান যাবেন’ বললেই চোখ-মুখ বাঁকিয়ে এমন একটা ভাব করে সাড়ে তিন মাইল লম্বা এক ভাড়া চাইত যে, সুস্থ লোকও অসুস্থ্য হয়ে যেতে বাধ্য, সেখানে ‘পাঠাও’ এক শান্তির নাম। ‘পাঠাও’ হল পাবলিকের শান্তি আর সিএনজিওয়ালাদের অশান্তি। অশান্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ওরা ‘পাঠাও’কে ডাকা শুরু করল ‘পাঠা’ নামে। এ ‘পাঠা’ মানে ‘পাঠানো’ নয়, পাঠীর হাজবেন্ড পাঠা। শালা ব্যাকরণ!
জ্যাম বাড়ছে জ্যামিতিক প্রগমনে। এই তো সেদিন যে রাস্তায় জ্যাম পড়ত না, সেখানে এখন জ্যামের অভয়ারণ্য। ‘পাঠাও’ ও এখন জ্যামে পড়ে। মোটর সাইকেলগুলো এত গা ঘেষাঘেষি করে থাকে যে নিজের পকেট মনে করে অন্যের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেয়াও বিচিত্র কিছু নয়।
এই যখন অবস্থা তখন আমি ভাবছি আরেকটা সার্ভিস চালুর কথা।
ঘাট্টু ডট কম!
নাম শুনেই ঘাবড়ে যাওয়ার দরকার নেই। ব্যাকরণে ফেলে দেই- সহজ হয়ে যাবে।
ঘাড়(দুপেয়ে মানুষের) + টু(দুই। মানে দুইজন।)। যোগ করার ফলে অপভ্রংশে গিয়ে দাড়াল ‘ঘাট্টু’। আর ডট কম তো ডোমেইনের নাম। তাহলে সার্ভিসের নাম হচ্ছে ঘাট্টু ডট কম! আর যিনি সেবা দিবেন তিনি ঘাট্টুর; যিনি সেবা নিবেন তিনি ‘ঘাট্টো’। অ্যাপস রেডি। সার্ভিস রেডি। সিস্টেমটা ‘পাঠাও’ এর মত। পার্থক্য শুধু এই যে, ‘পাঠাও’ এ ছিল বাইক আর ‘ঘাট্টু’তে নিজের ঘাড় আর বিধাতাপ্রদত্ত দুপেয়ে যন্ত্রদ্বয়। মনে করুন, একজন মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাবেন। অর্থাৎ তিনি ‘ঘাট্টো’। ‘ঘাট্টো’ অ্যাপসের মাধ্যমে ‘ঘাট্টুর’ সাথে কন্ট্যাক্ট করবেন। কমন প্লেসে মিট করে ‘ঘাট্টুর’ ‘ঘাট্টো’কে ঘাড়ে তুলে নিবেন। এরপর হাপাতে হাপাতে, গল্প করতে করতে মতিঝিলের দিকে যাত্রা শুরু করবেন। আশাকরি, যেকোন যানবাহনের আগেই পৌছে যাবেন। তবে শর্ত থাকে যে, ‘ঘাট্টো’র ওজন ৪০কেজির বেশি হতে পারবে না। এজন্য ‘ঘাট্টো’কে রেগুলার ব্যায়াম এবং শরীরের যত্ন নিতে হবে যাতে ওজন ৪০কেজির বেশি না হয়। যা Demographic Dividend এর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।
ঘাট্টু ডট কম সার্ভিসে তিনটি ক্লাস থাকবে – আপার, মিডল এবং লোয়ার। আপার ক্লাসের জন্য ‘ঘাট্টুর’ ঘাড়ে কুশন থাকবে; মিডল কোন কুশন পাবে না এবং লোয়ার ক্লাসের ‘ঘাট্টো’ ‘ঘাট্টুর’ সাথে হেঁটে হেঁটে যাবে। মাগার ঘাড়ে ওঠার সুযোগ পাবে না।
জ্যামের হাত থেকে বাঁচার জন্য এতসব সার্ভিসের পরে আসবে ‘ক্লোনিং ডট কম ওয়ান টাইম’ এবং ‘কেউ কোথাও যাব না ডট কম’।
আমাদের কারোর আর অফিসে আসতে হবে না। আমাদের ফটোকপি থাকবে অফিসে আর আমরা বাসায় বউ অথবা স্বামীর সাথে…। যদিও এতে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং এটা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে আমরা ‘কেউ কোথাও যাব না ডট কম’ বেছে নেব এবং বাসায় বসেই অফিস, কেনা-কাটা সবই করব। সত্যিকারের ডিজিটালাইজেশন।
দাদা বুঝিতে কষ্ট হইল!