bank math is easy for সনাতন দা
bank math এর preparation নেয়ার আগে ইশিকার সাথে পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলা যাক। সনাতন দা’র ক্লাসমেট ইশিকা। অঙ্কে এক্সপার্ট। ইশিকার দিকে সনাতন দা’র একটু আড়চোখে তাকানোর অভ্যাসও হয়ে গেছে। ঘোর কলি যুগ! চিঠির তো আর চল নেই। আছে এসএমএস। সাহস করে একদিন ইশিকার নম্বরে বুকের ধুকপুকানি জানিয়ে দিল। দুইদিন ক্লাস মিস। ইশিকার দিক থেকে কোন সাড়া নাই। হলোটা কী!
bank math এ দাদা কত পায়
পরেরদিন ক্লাসে দুজনের দেখা।
ইশিকাঃ সনাতন দা তোমার সাথে আমার কথা আছে। ক্লাস শেষে পান্থপথের মোড়ে দাড়াবে। দাদার মনে রঙিন রঙিন প্রজাপতিরা ডিগবাজি খেতে লাগল। আহ্ কী অনুভূতি! অবশেষে পান্থপথের মোড়ে-
ইশিকাঃ সনাতন দা, তুমি গত তিনটে ম্যাথ পরীক্ষায় ১৫০ এর মধ্যে কত পেয়েছ?
এই প্রশ্নে সনাতন দা’র প্রজাপতিগুলো একটু থতমত খেয়ে গেল। কোনটার ডানা ভেঙ্গে গেল; কোনটা কোমায় চলে গেল।
সনাতনঃ প্রথমটায় ৫টার মধ্যে দুইটা ভুল গিয়েছিল; একটা কমন পড়েনি; আর একটা পারিনি।দ্বিতীয়টায়, মাহফুজ স্যার খাতা নিয়ে গিয়েছিল। আর গতদিনেরটা দেইনি।
ইশিকাঃ না পেচিয়ে সরাসরি বল, ১৫০ এর মধ্যে কত পেয়েছ?
সনাতনঃ তুমি যদি কিছু মনে না কর, তাহলে ১০ পেয়েছিলাম।
ইশিকাঃ আমি কত পেয়েছিলাম?
সনাতনঃ ওই বরাবর যা পাও, তাই।
ইশিকাঃ তাই টা কত?
সনাতন দা একটু একটু করে বুঝতে পারছে তার নিয়তি তাকে কোনদিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
বললঃ ১৫০।
ইশিকাঃ ১০ থেকে ১৫০ এ পৌছতে তোমার কত বছর লাগবে, একবার ভেবে দেখেছ! আর তুমি এসেছ প্রেম করতে! লজ্জা থাকলে দুর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।
bank math না পারার ফলাফল
ফাজলামিতে ৪ স্কেলে ৩.৯০ পাওয়া সনাতন দা’র মুখে কেউ যেন একপোঁচ ঘন কালি লেপে দিল। অদৃশ্য গলাধাক্কা খেয়ে মাথাটা নিচু করে মেসে ফিরে এল। চিলেকোঠার জানালা দিয়ে কল্পলোকে দেখতে পেল সাদা মেঘের পরে ইশিকার ওড়নার কোনায় কোনায়, কামিজ থেকে ঝুলে পড়া সুতোয় শুধু ১৫০ দুলছে। উড়ছে আর টিটকারি মারছে। সনাতন দা তার চেয়ারে এসে বসলো। অনেকদিনের ধুলোজমা সিক্স টু টেনের ম্যাথ বইগুলোকে টেনে বের করল। ধুলো ঝেড়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠলো। হায় প্রেম! হায় ম্যাথ! দুচোখ দিয়ে নেমে আসা কান্নার স্রোতের সাথে বুকে জমা হতে লাগলো জিদ, জিদ আর জিদ। সনাতন দা’র রুমটা হয়ে গেল পিথাগোরাসের মস্তিষ্ক।
টার্গেট bank math
কোন রুটিন নয়। শুধু টার্গেট। ১ম সপ্তাহে সিক্সের সকল ম্যাথ; ২য় সপ্তাহে সেভেনের। এইভাবে চলতে লাগলো। তার ঘরের দেয়ালের সাদা রং আর রং নেই- এ প্লাস বি হোল স্কয়ার এর সূত্র, বাথরুমের দরজায় জ্যামিতির নক্সা ইত্যাদি যাবতীয় সূত্রের উৎসব। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অবস্থা এমন হল যে, কেউ যদি সনাতন দা’কে জিজ্ঞেস করে যে, ‘দাদা, বাজারে যাবেন না?’ দাদা উত্তর দেয়, ‘আগে সমীকরণটা বানিয়ে ফেল। এক্স এর মান বের করে ফেল। হয়ে যাবে।’ শয়নে-স্বপনে শুধু ম্যাথ আর ম্যাথ। ভাত খেতে গিয়ে ইলিশের টুকরোতেও সে প্যারাবোলার আকার পায়। একরাতে স্বপ্নের ঘোরে ইশিকার চুলগুলোকে আঙ্গুলে পেচাতে পেচাতে পদসংখ্যা বের করে ফেললো। দ্বিঘাত সমীকরণের বীজকে রোপন করে ফেললো অবলীলায়। খাতার সাথে হাতের মাথার স্থির যোগাযোগ স্থাপিত হল। যে কোন bank math এখন তার কাছে ডাল-ভাত। প্রয়োজনীয় সূত্রগুলোকে বুঝে বুঝে নিজেই সমাধান করলো। যখনই কোন ম্যাথের সমাধান তার এন্টেনার উপর দিয়ে যেত, তখনই কোন ছোট ভাই বা বড় ভাই, আদু ভাই বা স্যারের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করত না। প্রত্যেকটা বইয়ের উদাহরণগুলোকে পানিশমেন্ট দিয়ে সিজনিং করে ফেলল। তার ব্যাসিক এখন ব্যাংকের ভল্টের মতই স্ট্রং।
কিন্তু তারপরও একটা ‘কিন্তু’ থেকে গেল।
ঠিক একমাস পরে মাহফুজ স্যারের নেয়া ২০০ মার্কসের ম্যাথ পরীক্ষায় সনাতন দা পেল ১৭৫; ইশিকা পেল ২০০। কারণ, সনাতন দা’র জিদ অহঙ্কারে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। সনাতন দা তার ভুলগুলো শুধরে নিল। এর ঠিক পনের দিন পর, মাহফুজ স্যার ৫০০ স্কলার স্টুডেন্টদের একটা ৩০০ মার্কসের পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেন।
ঘোষণা দিয়ে বের হওয়ার পরপরই একটি নারীকণ্ঠের ঘোষণা শোনা যায়,‘যে ৩০০ মার্কসের মধ্যে ২৮০+ পাবে, তাকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের ২য় চরণ এসএমএস করে এবং পান্থপথের মোড়ে চোখে চোখ রেখে বলা হবে।’
সনাতন দা সেই পরীক্ষায় পেল ২৯০।আর ইশিকা পেল ২৮৫।
স্যার যখন ইশিকাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইশিকা, আমি জানি তুমিও ২৯০ পেয়েছ। তুমি ৫মার্কসের একটা অংক সঠিক করেও কেটে দিয়েছ। কেন?’
ইশিকা শুধু স্যারকেই বলল, ‘স্যার, আপনার ধারণা সত্যি। আমি যদি ওটা না করতাম, সনাতন দা’র মত একটা ছেলের ট্যালেন্ট হয়ে ওঠা হত না। ও ভেঙ্গে পড়ত। আমি চাই না ও ভেঙ্গে পড়ুক।’
তবে, ইশিকা সনাতন দা’কে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের ২য় চরণ এসএমএস করেছিল কি-না এবং পান্থপথের মোড়ে চোখে চোখ রেখে বলেছিল কি-না, ভবিষ্যতের যেকোন প্রিলিতেই বোঝা যাবে।